বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান যুদ্ধ আবারও ব্যাপক এলাকা জুড়ে দেখা দিয়েছে। সংঘাতে ব্যবহৃত মর্টার শেল, বোমা, গ্রেনেড ও গুলির শব্দ ভেসে আসছিল টেকনাফ সীমান্তের এপারে। কিন্তু এবার নতুন করে উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের মানুষও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনেছেন। যে সীমান্ত দিয়ে টানা তিন মাসের বেশি সময় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়নি।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের দেয়া তথ্য বলে মঙ্গলবার দুপুর থেকে শুরু হয়ে বধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে ভেসে বিকট শব্দ শোনেছেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ও উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকার লোকজন। একই সঙ্গে মঙ্গলবার রাত ১টা থেকে বুধবার দুপুর ১টা পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তের হ্নীলা, পৌরসভা, টেকনাফ সদর ও সাবরাং ইউনিয়নের মানুষ এসব বিকট বিস্ফোরণে শব্দ শোনতে পেয়েছেন।
সীমান্তের বসবাসকারিদের তথ্য মতে, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মি তুমুল সংঘর্ষ চলছে। ঘুমধুম ও উখিয়ার পালংখালী সীমান্তের ওপারে রাখাইনের বিভিন্ন গ্রামগুলোতে সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষের প্রভাব পড়ছে উখিয়ার ঘুমধুম ও পালংখালী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে। অন্যদিকে একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে টেকনাফ সীমান্তেও। মিয়ানমারের মংডু শহরের বিপরীতে নাফ নদের এপারে টেকনাফ সীমান্ত এলাকা।
পালংখালী বাসিন্দা রফিক মাহমুদ বলেন, মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে শুরু করে থেমে থেমে সকাল ১০টা পর্যন্ত ভারি গোলার শব্দ এপারে শুনা যাচ্ছে। যার কারণে সীমান্ত এলাকায় অযথা না যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ঘুমধুমে বাসিন্দা হামিদুল হক বলেন, মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত থেমে থেমে মিয়ানমারের মর্টার শেল ও ভারি বোমার শব্দ হয়। মিয়ানমার থেকে ৬৫ জন চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের মানুষ প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পার হয়ে উখিয়া হিন্দু রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে পাশে আশ্রয় নেওয়ার একদিনের মাথায় টানা কয়েক মাস পর আবার গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান ঘুমধুম ও পালংখালী সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী লোকজন। এতে সীমান্তবর্তী বসবাসকারী লোকজন ভয়ের মধ্যে আছেন। তবে এরমধ্যে টেকনাফ সীমান্তে টানা দশ মাস ধরে যুদ্ধ চলমান রয়েছে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, টানা ৩ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর পালংখালী সীমান্তের ওপারে ভারী গোলা ও মটার শেলে শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। সীমান্ত এলাকার লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ শরিফ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী টেকনাফের বাসিন্দারা কিছুটা স্বস্তিতে ছিল। হঠাৎ করে মঙ্গলবার রাতে আবারও বিস্ফোরণের শব্দে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে আর কতদিন চলবে। বর্তমানে সীমান্ত এলাকার মানুষগুলো আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছেন।
হ্নীলার ইউপির চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী , টেকনাফ সদরের জিয়াউর রহমান ও সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, বিস্ফোরণের বিকট শব্দে এলাকার বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি কেঁপে উঠছে। কিছুদিন বিরতি থাকলেও সীমান্তের লোকজন শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। বিশেষ করে, শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে খুবই বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টানা দশ মাসের বেশি সময় রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়ছে আরাকান আর্মি। ইতিমধ্যে আরাকান আর্মি মংডু শহরের আশপাশে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) বেশ কিছু সীমান্তচৌকি দখলে নিয়েছে। বর্তমানে মংডু টাউনের অভ্যন্তরে থাকা দেশটির সেনাবাহিনী ও বিজিপির দুটি ব্যাটালিয়ান দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন আরাকান আর্মির সদস্যরা। এ দুটিতে প্রায় পাঁচ হাজারের মতো সৈন্য রয়েছে। এতে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সরকারির বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে রোহিঙ্গা স্বশস্ত্র গোষ্ঠিগুলোও।
এর মধ্যে নতুন করে ঘুমধুম বাইশফাঁড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা পরিবারের ৬৫ জন সদস্য অনুপ্রবেশ করেছে। তারা বর্তমানে উখিয়ার কুতুপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশাসনের নিরাপত্তা হেফাজতে রয়েছে।
এদিকে, গত ১২ নভেম্বর টেকনাফ থেকে নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উধাও হওয়া দুইটি ট্রলারের ৭ মাঝি-মাল্লা কোন হদিস পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে গত ১৩ নভেম্বর উখিয়ার নাফনদী সীমান্ত থেকে মাছ ধরার সময় পাঁচ জেলেকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে যাওয়ার পর এক জনের মরদেহ উদ্ধার হলেও এখনও হদিস নেই অপর ৪ জনের।
ইতিমধ্যে আরাকান আর্মির পক্ষে গত ১২ নভেম্বর ২ টি ট্রলার সহ ৭ মাঝি-মাল্লাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফের ২ ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply